1. mohib.bsl@gmail.com : admin :
  2. info@barisalerkhobor.com : editor :
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ অপরাহ্ন

সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কমানো সম্ভব?

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ০ Time View

বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আগরওয়ালার বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।

এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সোনা ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচার-সহ নানা অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোনার বাজারে তথাকথিত ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি হয় না। ফলে এই খাতে ‘সিন্ডিকেট’-এর দ্বারা সোনার মূল্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পুরনো।

চোরাচালানের মাধ্যমে যে সব স্বর্ণ আসে, সেগুলো দেশের বাজারে বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করেন। ফলে চোরাচালান-কেন্দ্রিক এই খাত নজরদারির বাইরে থাকার সুযোগ নিচ্ছেন তারা।

দাম নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো তা নির্ধারণেরও সুযোগ পাচ্ছেন।

কারণ সরকার স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে না, করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস)।

তবে, ব্যবসায়ীদের দাবি, বাংলাদেশে সোনা আমদানির নীতিমালা ত্রুটিপূর্ণ। ফলে সোনা আমদানি হয় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খাতে জবাবদিহিতা ও নজরদারি নেই। ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কর। আর মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে, আন্তর্জাতিক বাজার বা প্রতিবেশী দেশের বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে কি না, তাও দেখা হয় না।

ফলে যেভাবে উচ্চহারে দাম নির্ধারণ করা হয় সেটা কতখানি যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন সব সময়ই ছিল বলে জানান তারা।

তাই পুরো বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছ্বতা আনা, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এছাড়া চোরাচালান ছাড়া বৈধ পথে সোনা আমদানি কীভাবে করা যাবে সে বিষয়গুলো আরো সহজীকরন করারও আহ্বান জানান তারা।

কেন সোনা আমদানি হয় না?

সরকার ২০১৮ সালে সোনা আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করে। পরে ২০২১ সালে তা সংশোধন করা হয়। স্বর্ণের বাজার ও জুয়েলারি ব্যবসায় স্বচ্ছ্বতা আনতে ওই বছরই একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক-সহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

শুরুর দিকে পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান কিছু স্বর্ণ আমদানি করলেও, পরে তা মুখ থুবড়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা নিজেরাও স্বীকার করছেন, বাংলাদেশে বৈধ পথে সোনা আমদানি হয় না।

কিন্তু কেন হয় না, এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা দুষছেন সাবেক সরকারের সোনা আমদানির নীতিমালাকে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের দাম নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, আগের সরকারের গোল্ড ইমপোর্টের ক্যাটেগরিটা বেশ ত্রুটিযুক্ত ছিল। আমরা অনেক আবেদন করেছি যে, গোল্ডের ইমপোর্টের যে বিষয়টা লাইসেন্স দিলেন কিন্তু গোল্ড আমদানি করার কোনও সুযোগ নাই! কারণ ওখানে ট্যাক্স ক্যাটেগরি যেটা ইমপোজ করা আছে অলমোস্ট ১৮ থেকে ১৯ পারসেন্ট সব কিছু মিলিয়ে। অন দ্য আদার হ্যান্ড এটা ‘হ্যাসেলফুল’ (ঝামেলায় পরিপূর্ণ) ছিল।

এছাড়া সোনা আমদানির পুরো প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এবং নানা জটিলতায় সেটা আর সামনে এগোতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Advertisement

তিনি জানান, গোল্ড ইমপোর্টের জন্য পারমিশন থেকে শুরু করে অলমোস্ট ফিনিশ করা পর্যন্ত ২৪ থেকে ২৫ দিন পার হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। পাঁচ-ছয়জন ইমপোর্টার ইমপোর্ট করেছিল, কিন্তু তারা আর সামনে এগোতে পারেনি এসব বাধাগুলোর কারণে!

‌‘শিথিল’ ব্যাগেজ রুলস

ব্যবসায়ীদের দাবি সরকার একদিকে আমদানি নীতিমালা করে সোনা আমদানি করতে বলে, অথচ ব্যাগেজ রুলসে দেয়া হয়েছে শিথিলতা।

ব্যাগেজ রুলসে এক ভরি সোনা শুধুমাত্র চার হাজার টাকায় দেশে আনার সুযোগ রয়েছে।

মাসুদুর রহমান বলেন, এটা টোটালি কন্ট্রাডিকটরি (স্ববিরোধিতায় ভরা)। ইমপোর্টকে যদি এনকারেজ করতে চান আবার ব্যাগেজ রুলসের আওতায় সুযোগ করে দেন, তাহলে তো ইমপোর্ট হবে না। এই জটিলতাগুলো নিয়ে আমরা চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীর-সহ অনেকবার চেষ্টা করেছি তিন বছর থেকে। কিন্তু তখন এনবিআরের যারা কর্ণধার ছিলেন তারা আমাদের কথায় কান দেননি।

বিএফআইইউ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই খাতে আমদানি রফতানির সুযোগ হলে ২২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে। যাতে দশ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আহরণ হবে দেশের।

এই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মাসুদুর রহমান দাবি করেন এই সেক্টরকে ‘এগুতে দেয়া হয়নি’ এবং এই খাত ‘সরকারের সহযোগিতা পায়নি’। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।

সোনার দাম সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীর তাঁতীবাজারে বুলিয়ান (পোদ্দার) মার্কেট সোনার যে দাম নির্ধারণ করে সেটা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন সোনার দাম নির্ধারণ করে।

Advertisement

বুলিয়ান মার্কেট হলো যেসব ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের ব্যবসা করেন তাদের মার্কেট। বাংলায় একেই পোদ্দার বলা হয়। যারা সোনা চোরাচালানে জড়িত তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।

বাজুস দাম নির্ধারণের ক্ষেত্র ‘অসহায়’ বলে দাবি তাদের। কারণ সরকার ডলারের রেট দেয়, কিন্তু সোনার রেট নির্ধারণ করে না।

মাসুদুর রহমান বলেন, সরকার গোল্ড আনেও না, গোল্ড সাপ্লাইও দেয় না। বাজুস দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধতা ধরে রাখার জন্য সোনার রেট দেয়।

রেট কীভাবে দেয় বাজুস?

তিনি বলেন, যেমন ধরুন তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট। আমরা কিন্তু বুলিয়ান মার্কেটের রেটকে ফলো করি। বুলিয়ান মার্কেট সলিড গোল্ড নিয়ে ডিল করে।

বুলিয়ান মার্কেটে সোনা কোথা থেকে আনা হয়, এমন প্রশ্নে তার দাবি, সেটা আসলে আমাদের ধারণা নেই। ইট ইজ টোটালি বেইজড অন স্মাগলিং। যেটা আমরা জানি। এদেশের প্রশাসনও জানে।

এদের একটা সিন্ডিকেট আছে দাবি করে মাসুদুর জানান, দুবাই থেকে ব্যাগেজ রুলসে যেসব সোনা আসে বা মানুষজন যে সোনা আনে অথবা ইনফরমাল ওয়েতে যে সোনা আসে তারা সে সব সোনার উচ্চ মূল্য মুনাফা নির্ধারণ করে সোনার রেটকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু বহির্বিশ্ব থেকে দেশে সোনা আমদানি হয় না, তারা দশ-বারো হাজার টাকা রেট বাড়িয়ে একটা রেট নির্ধারণ করে রাখে। ওইটা ফলো করতে বাজুস বাধ্য।

বুলিয়ান মার্কেটের সিন্ডিকেট বেশ শক্তিশালী বলে দাবি করেন তিনি। মূলত ওই মার্কেটের রেট অনুসরণ করেই বাজুস দাম নির্ধারণ করে থাকে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

ফলে তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট যে সোনার রেট নির্ধারণ করে, তার ভিত্তিতে শুধু দুই দশমিক আট শতাংশ মুনাফা যুক্ত করে দাম নির্ধারণ করা হয় বলে দাবি এই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর।

বাংলাদেশে সোনার গহনা তৈরিতে ১২ শতাংশ ‘ওয়েস্টেজ’ (অপচয়) থাকে যা বাকি বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি। অন্য দেশে এই পরিমাণ ১ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশে সেটা অলংকার তৈরির চার্জ হিসেবে নেওয়া হয় বলে জানান মি. রহমান। এতেও দাম বৃদ্ধি পায়।

সোনার দাম বাড়তি হওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে অনেক ক্রেতাই দুবাই, কাতার বা পার্শ্ববর্তী দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে এখন যে ধারায় সোনার ব্যবসা চলছে তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চলছে না। তারা বলছেন, যারা স্মাগলিং করত তারা এই সিন্ডিকেটের অংশীদার। মূলত ২০০৯ সাল থেকে এ ধারা চলছে বলে দাবি তাদের।

ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান দোলন এবং সাধারণ সম্পাদক দিলীপ আগরওয়ালের দিকেও ইঙ্গিত করছেন। সে সময় সোনার রেট উচ্চ মাত্রায় ছিল বলে দাবি তাদের।

এদিকে, মাসুদুর রহমানের দাবি ওই ধারা থেকে বের হতে তারা ইতোমধ্যেই পাঁচ শতাংশ সোনার রেট কমিয়েছেন।

যদিও তার এই দাবির তেমন কোনও প্রভাব বাংলাদেশের সোনার বাজারে গত কয়েক মাসেও দেখা যায় নি।

মঙ্গলবার রাতেই সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সাথে তার বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান, অর্থ পাচার-সহ নানা অভিযোগের অনুসন্ধানও শুরু করেছে সিআইডি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২৪

Theme Customized By BreakingNews