1. mohib.bsl@gmail.com : admin :
  2. info@barisalerkhobor.com : editor :
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন

হাসিনা আর ফিরবেন না

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১ Time View

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসকদের সে দেশের রাজনীতিতে ফিরে আসার তেমন কোনো নজির নেই। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি শুধু তার রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে আনেনি, তার দল আওয়ামী লীগেরও রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে।

দিল্লির সমর্থনে হাসিনার দেড় দশকের স্বৈরশাসন টিকে ছিলো। প্রতিবেশী দেশটিতে আশ্রয় নেয়ার কারণে এখনও তার ফিরে আসা নিয়ে আলোচনা হয়। সম্প্রতি হাসিনার কথোপকথনের বেশ কয়েকটি অডিও প্রকাশ হয়েছে। সেখানে তার কণ্ঠে এমন কথা শোনা গেছে, তিনি বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছেন। চট করে দেশে ফিরবেন বলে তার দলের এক কর্মীর সাথে আলাপে জানিয়েছেন। এসব অডিও কথোপথনের সত্য-মিথা যাচাই-বাছাই করা সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার অতীত রাজনীতি প্রমাণ করে না- তিনি খুব সাহসী রাজনীতিক ছিলেন। বরং তার রাজনৈতিক জীবন ছিলো আপোসকামিতা ও পলায়নের।

শেখ হাসিনার চেয়েও কম নৃশংস স্বৈরশাসকরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আর কখনো দেশে ফিরতে পারেননি। ইরানের মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী দোর্দন্ড প্রতাপের সাথে দেশ শাসন করেছেন। ইরানকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার অবদান কম নয়। তিনি সে সময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর শাসকদের মধ্যে পশ্চিমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। ১৯৭৯ সালে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর রেজা শাহ আর ইরানে ফিরে আসতে পারেননি। মিশর, মরক্কো, মেক্সিকো থেকে বাহামাসহ নানা দ্বীপ দেশে বাস করে শেষ পর্যন্ত মারা যান মিশরে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশ তার যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতেও রাজি ছিলো না।

উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিন ১৯৭৯ সালে পালিয়ে এসেছিলেন সৌদি আরবে। ২০০৩ সালের আগস্টে সেখানে তার মৃত্যু হয়। আরব বসন্তের সময় ২০১১ সালে তিউনিসিয়া থেকে পালিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছিলেন বেন আলী। তিউনিসিয়ায় বিক্ষোভকারীদের হত্যা, মানিলন্ডারিং ও মাদক পাচারের অভিযোগে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। দণ্ড মাথায় নিয়ে ২০১৯ সালে সৌদি আরবে মৃত্যু হয় তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক বেন আলীর।

মাত্র তিন বছর আগে ২০১৪ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি। তালেবানদের সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সাথে সাথে আশরাফ গানি হেলিকপ্টার নিয়ে আরব আমিরাতে পালিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো ব্যবস্থা পর্যন্ত নেয়নি। এখন আশরাফ গানি কোনো আলোচনাতেই নেই। তিনি আর কখনো আফগানিস্তানে ফিরে আসবেন এমন কল্পনাও করা যায় না।

স্বৈরশাসকরা দেশ ছাড়ার পর দেশে ফিরে আসার কথা আর কখনো ভাবেন না। তারা জানেন, এর পরিণতি কী হতে পারে। এমনকি তাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেশে ফিরে রাজনীতিতে জড়াননি। একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে ফিলিপাইনের ফার্ডিনান্ড মার্কোসের পুত্রের ক্ষেত্রে। স্বৈরশাসক ফার্ডিনান্ড মার্কোস গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৮৬ সালে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি মারা যান। তার পুত্র বংবং মর্কোস ফিলিপাইনের রাজনীতিতে আবার ফিরে এসেছেন।

শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন একজন স্বৈরশাসক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে তার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা থাকার পরও ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম পার্লামেন্টে নির্বাচনে তিনি বিরোধী দলের অস্তিত্ব মেনে নেননি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনটি ছিলো ভোট ডাকাতির নির্বাচন। এরপর তিনি একদলীয় শাসন কায়েম করেন। প্রধানমন্ত্রী থেকে নিজে প্রেসিডেন্ট হয়ে উঠেন। শেখ মুজিবুর রহমানের একদলীয় শাসন কায়েমের পেছনে তখনও ভারত এবং রাশিয়ার জোরালো সমর্থন ছিলো। একদলীয় শাসন কায়েমের মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ রুদ্ধ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে সেনা অভ্যুত্থানে তিনি ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেন।
জেনারেল মইন উদ্দিন আহমেদ ও ফখরুদ্দিন আহমেদের অবৈধ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার বিনিময়ে ২০০৮ সালে প্রশ্নবিদ্ধ এক নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশ ধীরে ধীরে হয়ে উঠে ভারতের নতুন ঔপনিবেশ। শেখ হাসিনার পিতার একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে যেভাবে ভারত ও রাশিয়া সমর্থন দিয়েছে। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের প্রতিও ছিলো ভারত ও রাশিয়ার সমর্থন।

শেখ হাসিনার হাত শুধু ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত নয়, ভারতের স্বার্থে এ দেশের স্বাধীনচেতা রাজনীতিবিদদের তিনি প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করেছেন। নিয়তির নির্মম পরিহাস হচ্ছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে আজ তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ছাত্র-জনতার হত্যার তদন্ত করতে এখন বাংলাদেশে আসছে জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। হয়তো শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক আদালতের মুখোমুখি হতে হবে।

শেখ হাসিনা তার পিতার পথ অনুসরণ করে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে কখনো রাতের ভোট, কখনো ডামি ভোট করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি এজন্য পুরোপুরিভাবে ছিলেন ভারতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু শেখ হাসিনা কখনো জনগণের ম্যান্ডেটের প্রয়োজন বোধ করেননি। তাদের মুখোমুখি হননি। শেখ হাসিনা আর কখনোই জনগণের মুখোমুখি হতে পারবেন না।

শেখ হাসিনা যদি দেশ ও দলের প্রতি দায়িত্ব বোধ করতেন তাহলে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করতেন। আন্দোলনের মুখে ৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেছিলেন। বিরোধী দলের দাবি মেনে নিয়ে সংবিধান সংশোধন করেছিলেন। তিনি জনগণের মুখোমুখি হয়েছিলেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিরোধী দলের আসনে বসেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সে সাহস ছিলো না। কারণ তার হাতে লেগে আছে বহু মানুষের রক্তের দাগ।
শেখ হাসিনা জানতেন দেশের মানুষ কৃতকর্মের জন্য তাকে কতটা ঘৃণা করে। তিনিও বিক্ষুদ্ধ মানুষকে শত্রু বিবেচনা করেছেন। পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দমন পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছেন। তার নির্দেশে অন্তত আটশ মানুষকে হত্যা, দশ হাজার মানুষক আহত ও চারশ মানুষকে অন্ধ করে ফেলা হয়েছে। এমনকি হাসিনার পুলিশ নিহত মানুষের লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো নৃশংসতা দেখিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত তিনি দেশের মানুষের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে ব্যবহারের চেষ্টা করেন। হাসিনা যদি পালিয়ে না যেতেন, গণভবনে তার পরিণতি হতে পারতো লিবিয়ার স্বৈরশাসক গাদ্দাফির মতো। প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীর তড়িৎ সিদ্ধান্তে তিনি প্রাণে বেচেঁছেন।

দেশের মানুষ তো বটে, তার দলের নেতাকর্মীদের মুখোমুখি হওয়ার মতো সাহস আর শেখ হাসিনার নেই। শেষ পর্যন্ত তিনি দলের নেতাকর্মীদের জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলেন। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে চেষ্টা করেছেন গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টির। তিনি শুধু নৃশংস শাসক ছিলেন না একই সাথে ছিলেন ভীরু, পলায়নপর ও লোভী রাজনীতিক। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছিলো তার রাজনীতির লক্ষ্য। বিশ্বের অন্য স্বৈরশাসকদের পরিণতি থেকে তার পরিণতি ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। তার শেষ আশ্রয়স্থল ভারত। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশ তাকে আশ্রয় দেবে- এমনটি বিশ্বস করার কোনো কারণ নেই।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২৪

Theme Customized By BreakingNews