জাতীয় ক্যাম্পেইনে এবার পাঁচ কোটি শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। কেউ কোনো টাকা আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই টিকার মান শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরই এটি জাতীয় ক্যাম্পেইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারি অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে এই টিকা দেওয়ার নিবন্ধন ছাড়াও ম্যানুয়ালি টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১২ অক্টোবর থেকে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ২০১৯ সালে এই টিকা পাকিস্তানের দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২ সালে এই টিকা নেপালেও সফলভাবে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ভারতের মুম্বাইয়ে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে কার্যক্রম চলমান থাকবে।
ভাসমান পথশিশুদের টিকার ব্যবস্থা কীভাবে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?—জানতে চাইলে বিশেষ সহকারী বলেন, এনজিও ব্যুরো পথশিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। ঠিকাদান কর্মসূচি সফল করতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করছে।
টাইফয়েডের টিকা কোন্ দেশের তৈরি?—জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট টিকা তৈরি করছে। গ্যাভি প্রকল্পের মাধ্যমে এই টাকা বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। আজ ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে এক কোটি ৬৮ লাখ শিশুর জন্য নিবন্ধন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ অফ লাইনের নিবন্ধন করা হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে দেশব্যাপী শিশু-কিশোর এবং সন্তান ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নারীদের টিকা দিয়ে প্রতিরোধযোগ্য বিভিন্ন সংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ টিকা দিয়ে প্রতিরোধযোগ্য মারাত্মক সংক্রমণ রোগগুলোর মাঝে টাইফয়েডের জ্বর অন্যতম। সালমোনেলা টাইফি নামে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই রোগ হতে পারে। দূষিত পানি খাবারের মাধ্যমে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে টাইফয়েড হয়ে থাকে।
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ স্টাডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বে ৭০ লাখের বেশি মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৯৩ হাজার মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সি শিশুরা বেশি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ২০২১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৮ হাজার মানুষ টাইফয়েড জ্বরে মৃত্যুবরণ করে, যার মধ্যে ৬৮ শতাংশ ১৫ বছরের কম বয়সি শিশু।