1. mohib.bsl@gmail.com : admin :
  2. info@barisalerkhobor.com : editor :
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও গাজায় ইসরাইলের ভয়াবহ বোমাবর্ষণ

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৮ Time View

দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ করতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভোররাত থেকে গাজা উপত্যকায় অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলের হামলা। গাজা সিটি ও খান ইউনিসে ইসরাইলি বিমান ও আর্টিলারির ব্যাপক গোলাবর্ষণে অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, ইসরাইলি কোয়াডকপ্টার ড্রোন থেকেও গাজা শহরের বেসামরিক মানুষের ওপর বোমা ফেলা হয়েছে। রাতভর তীব্র বিস্ফোরণ ও আগুনে আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে।

মিডলইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এদিকে ইসরাইলি ট্যাংকগুলো আল-রাশিদ সড়ক অবরোধ করে দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ফেরা ঠেকিয়ে দিয়েছে। সেনারা মাঝেমধ্যেই গুলি ও গোলা ছুড়ছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইলি সেনারা যেখানে অবস্থান করছে—সেসব এলাকায় না যেতে।

মধ্যস্থতাকারীদের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার সকালে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা আসে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি জানান, ‘উভয় পক্ষ প্রথম ধাপের এমন এক চুক্তিতে পৌঁছেছে যা যুদ্ধের অবসান, বন্দি বিনিময় ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ সুগম করবে।’

হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘চুক্তির লক্ষ্য গাজায় যুদ্ধের সমাপ্তি, দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার প্রবেশ এবং বন্দি বিনিময় নিশ্চিত করা।’

অন্যদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘আজ ইসরাইলের জন্য এক মহান দিন।’ তিনি বন্দিমুক্তির প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

নেতানিয়াহু বলেন, বৃহস্পতিবারই তার মন্ত্রিসভা বৈঠক বসবে চুক্তি অনুমোদনের জন্য, যাতে ‘ইসরাইলি বন্দিদের ঘরে ফেরানো যায়।’

মিডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে।

চুক্তির প্রথম ধাপে রোববার বা সোমবারের মধ্যে হামাস ২০ জন জীবিত ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেবে, এর বিনিময়ে ইসরাইল প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে। চূড়ান্ত তালিকা এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই প্রায় ৪০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা পরবর্তী দিনগুলোতে আরও বাড়ানো হবে।

ইসরাইলি বাহিনী ধাপে ধাপে গাজা উপত্যকা থেকে সরে যাবে, তবে প্রথম ধাপে প্রত্যাহারের সীমানা কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

চুক্তির বাকি অংশ—যেমন ইসরাইলের পূর্ণ প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন ও অন্যান্য শর্ত—পরে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক অভিযানে ইসরাইলে আঘাত হানার পর শুরু হয় এ যুদ্ধ। হামাস জানায়, ইসরাইলের দখলনীতি, আল-আকসা মসজিদে ক্রমবর্ধমান লঙ্ঘন, গাজায় মানবিক অবরোধ ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতনের জবাবেই তাদের এই অভিযান।

প্রথম ঘণ্টাগুলোতেই ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড ভেঙে পড়ে, ফলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। হামাসের হামলায় অন্তত ১,১৮০ জন নিহত হয়, যাদের প্রায় অর্ধেকই বেসামরিক নাগরিক। পরবর্তী সংঘাতে আরও সাত শতাধিক ইসরাইলি নিহত হয়।

জবাবে ইসরাইল গাজায় ভয়াবহ বিমান ও স্থল অভিযান চালায়, যা টানা দুই বছর ধরে চলে। অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও বোমাবর্ষণে ধ্বংস হয়ে যায় গাজার প্রায় প্রতিটি স্থাপনা—বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ ও গির্জা।

ফাঁস হওয়া ইসরাইলি সেনা তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই সাধারণ নাগরিক।

এই সময় গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন রাষ্ট্র ইসরাইলের এ কর্মকাণ্ডকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২৪

Theme Customized By BreakingNews