1. mohib.bsl@gmail.com : admin :
  2. info@barisalerkhobor.com : editor :
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে কারা, কীভাবে টিভি লাইসেন্স পেলেন?

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১০ Time View

নতুন দুটি টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন পাওয়ার পর অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশে আগের সরকারগুলো যেভাবে দলীয় বিবেচনায় টেলিভিশন লাইসেন্সের অনুমোদন দিত এবার অন্তর্বর্তী সরকারও তাই করেছে। এবার যে দুজনের নামে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের একজন জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নেতা, যিনি দলটিতে যোগ দেওয়ার আগে একটি পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। খবর বিবিসি বাংলার।

অন্যজন এনসিপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নেই, তবে এনসিপি গঠনের আগে এর উদ্যোক্তারা যে জাতীয় নাগরিক কমিটি করেছিলেন তাতে জড়িত ছিলেন তিনি। একটি পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার।

তারা দুজনই অবশ্য বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তারা আইন ও নিয়ম মেনেই লাইসেন্স পেয়েছেন এবং তাদের উদ্যোগের সঙ্গে বিনিয়োগকারী ও পেশাদার লোক সম্পৃক্ত আছেন।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন একটি গণমাধ্যম কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছিল এবং বেসরকারি টেলিভিশনের লাইসেন্স পর্যালোচনার দায়িত্ব ওই কমিশনই পালন করবে বলে মতামত দিয়েছিল।

কিন্তু তা না করে সরকার বিগত সরকারের মতো করেই নিজেদের ঘনিষ্ঠদের টিভি লাইসেন্স দিয়েছে বলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তারা এ বিষয়ে (লাইসেন্স দেওয়া) সেরা চর্চা কেমন হতে পারে তারই সুপারিশ করেছিলেন।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে বিবেচনায় নিয়ে টেলিভিশন লাইসেন্স বা অনুমোদনের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা তৈরির সুযোগ সরকারের ছিল।

কিন্তু সেটি না করে সরকার এই বার্তাই কি দিল কিনা যে আমরা কর্তৃত্ববাদের পতন চাই, কিন্তু কর্তৃত্ববাদী সংস্কৃতিই টিকিয়ে রাখতে চাই, বলেছেন তিনি।

সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম অবশ্য রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

একই সঙ্গে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, সরকার যেহেতু কোনো মিডিয়া বন্ধ করছে না, ফলে ফ্যাসিবাদবিরোধীদের মিডিয়া দিয়ে মন্ত্রণালয় চাচ্ছে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে।

এবার টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্সের খবর গণমাধ্যমে আসার পরেই আলোচনা হচ্ছে, যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাদের কোনো বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে এবং চ্যানেল পরিচালনার মতো বিশাল আর্থিক সক্ষমতা তাদের আছে কিনা।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে লাইসেন্স পেয়ে আলোচনায় আসা এনসিপির নেতা আরিফুর রহমান তুহিন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দলটি গঠিত হওয়ার আগেই ৩৬ মিডিয়া লিমিটেড নামক কোম্পানির পক্ষে তিনি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন।

তিনি বলেছেন, লাইসেন্স কখনো ব্যক্তির হয় না, কোম্পানির পক্ষ থেকে একজন আবেদন করে এবং তার নামে হয়।

লাইভ টিভি নামে আরেকটি টিভির লাইসেন্স পাওয়া আরিফুর রহমান বলছেন, তারা দেশের বিদ্যমান আইন ও নিয়ম মেনেই আবেদন করেছেন।

জানা গেছে, গত জুন মাসে আবেদন করে গত মাসের শেষ দিকেই লাইসেন্সের অনুমোদন পেয়েছে আরিফুর রহমানের এই কোম্পানিটি।

তবে দুটি কোম্পানিতেই বিনিয়োগকারী হিসেবে বিএনপির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন আছেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশনের অনুমোদন দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। লাইসেন্সের জন্য তাদের কাছেই আবেদন করতে হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪ সালে করা জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালায় সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছিল এবং এক্ষেত্রে সম্প্রচার বিষয়ক লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সুপারিশ করার কথা সম্প্রচার কমিশনের।

ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার বা সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।

কিন্তু সেই সরকার পরে আর এই ধরনের কোনো কমিশন গঠন করেনি। আবার এ মুহূর্তে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো আইনও নেই।

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আইনটি করতে পারলে তারাই বেশি খুশি হতেন।

জানা গেছে, বেসরকারি মালিকানায় স্যাটেলাইট টিভির লাইসেন্সের আবেদনকারীকে তার আবেদনের সঙ্গে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয় সেগুলো হলো–– জাতীয় পরিচয়পত্র, আর্টিক্যাল অব মেমোরেন্ডাম, সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সার্টিফিকেট, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট, প্রজেক্ট প্রপোজাল ও চ্যানেল চালানোর মতো সামর্থ্য আছে উল্লেখ করে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা।

এসব ক্ষেত্রে মালিকদের চাপ দিয়ে নিজেদের লোক নিয়োগের ব্যবস্থা করারও অভিযোগ এসেছে বর্তমান সরকারের আমলে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেলিভিশন লাইসেন্স বিক্রি বাণিজ্যও গত দুই দশকে বার বার আলোচনায় এসেছে।

লাইসেন্স ব্যবসা বা মালিকানা হস্তান্তর নিয়ে বাণিজ্যের একটি চিত্র উঠে এসেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে।

এতে বলা হয়, লাইসেন্স নেওয়ার সময় সবাই হলফনামায় আর্থিক সামর্থ্য ও চ্যানেল প্রতিষ্ঠায় সক্ষমতার কথা বলেছেন। তাদের অনেকেই আবার লাইসেন্স নিয়ে পরে উচ্চমূল্যে মালিকানা বিক্রি করেছেন। এভাবে লাভবান হয়েছেন রাজনৈতিক বিবেচনায় পাওয়া অনেক টেলিভিশন মালিক। এমনকি বিক্রির আগে সরকারের অনুমতিও নেওয়া হয়নি।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, একাত্তর টিভির লাইসেন্স অর্ধেক বিক্রি করা হয়েছিল মেঘনা গ্রুপের কাছে। আর সময় টিভির লাইসেন্স বিক্রি হয়েছিল সিটি গ্রুপের কাছে। চ্যানেল নাইনের ৮৫ শতাংশ মালিকানা ২২ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছিল এনটিভির সাবেক এক কর্মকর্তার কাছে।

এছাড়া, বিএনপি আমলে মোসাদ্দেক আলী ফালুর আরটিভির মালিকানা পরে চলে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের মোর্শেদুল আলমের কাছে।

বিএনপির সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানের দেশটিভির লাইসেন্স কিনে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী ও আসাদুজ্জামান নুর।

এনসিপি নেতা আরিফুর রহমান তুহিন ও সাবেক নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুর রহমানকে লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সরকারের তথ্য উপদেষ্ঠা মাহফুজ আলম।

রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। বরং, সরকার যেহেতু কোনো মিডিয়া বন্ধ করছে না, ফলে ফ্যাসিবাদবিরোধীদের মিডিয়া দিয়ে মন্ত্রণালয় চাচ্ছে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে। মন্ত্রণালয় মনে করে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে নতুন মিডিয়া আসুক, বলেন তিনি।

আলম আরও বলেন, এটা নতুন করে আইনের মাধ্যমে করতে পারলে আমরা খুশি হতাম।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২৪

Theme Customized By BreakingNews