1. mohib.bsl@gmail.com : admin :
  2. info@barisalerkhobor.com : editor :
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০১ অপরাহ্ন

হাসিনা পরিবারের বিচার শুনানি শেষ পর্যায়ে

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৩৩ Time View

রাজউকের প্লট দুর্নীতির ৬ মামলা থেকে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানা ও ছেলে জয়, মেয়ে পুতুলসহ হাসিনা পরিবারের কারও বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তেই অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। সেই তদন্ত রিপোর্টের ওপর চার্জ গঠনের পর এখন চলছে বিচার শুনানি। শুনানিতে মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষীরা এসে জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিভাবে নিজের নামে ও তার পরিবারের ৭ জন সদস্যের নামে রাজউক থেকে বিঘায় বিঘায় প্লট নিয়েছেন। হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তিনি বলতেন তার নামে বা পরিবারের কারও নামে দেশে তিনি কোনো সম্পদ করেননি। তাদের পরিবারের কোনো দুর্নীতি নেই। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নেই তিনি রাত-দিন কাজ করছেন। কিন্তু গেল বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাজউক থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট নেওয়ার ঘটনা সেই দুর্নীতির একটি। মামলাগুলোর বিচার শুনানি চলছে ঢাকার দুটি বিশেষ জজ আদালতে। বিচার শুনানি এখন শেষের পথে। কবে নাগাদ তাদের বিরুদ্ধে রায় হতে পারে বুধবার দুদক চেয়ারম্যানের এক বক্তব্য থেকে তারও ধারণা পাওয়া গেছে। টিআইবির সঙ্গে এক সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠান শেষে দুদক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মোমেন জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ৬টি মামলা চলমান রয়েছে। অক্টোবরের শেষ দিকে বা নভেম্বরের মধ্যে সেই মামলার রায় হতে পারে। রায় কি দেবেন সেটা আদালতের বিষয়। বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এই আশাবাদ প্রকাশ করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেছেন, ‘এসব দুর্নীতির মামলা থেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের কারও বাঁচার উপায় নেই। আদালতে এরই মধ্যে অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ এসেছে। আমাদের কাছেও সব প্রমাণ আছে।’

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ৬টি মামলায় আর তিন থেকে চারটি ধার্য তারিখ শুনানির পরই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে। সেক্ষেত্রে নভেম্বরেই সবকটি মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করে, এসব মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনাসহ জড়িত আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

৩১ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, জয় ও পুতুলসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার দুটি বিশেষ জজ আদালত। এর মধ্যে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে ৩ মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ১১ আগস্ট। এই ৩ মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

অপরদিকে ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ রবিউল আলমের আদালতে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আরও ৩ মামলার বিচার শুনানি শুরু হয় ১৩ আগস্ট। মামলায় ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের ৬ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর কয়েকটি ধার্য তারিখ সামনে। এরপরই রায় ঘোষণা করা হবে। আমরা আশা করি নভেম্বরের মধ্যেই রায় ঘোষণা করা হবে। হাসিনা ও তার পরিবারের সবার প্লট দুর্নীতির সব প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তিনি আরও বলেন, এসব মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন বা ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হতে পারে। আমরা সর্বোচ্চ কারাদণ্ড চেয়ে আদালতে শুনানিতে যুক্তি তুলে ধরব।

এদিকে, টিআইবির সঙ্গে এক সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠান শেষে দুদক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মোমেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ৬টি মামলা চলমান রয়েছে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ বা নভেম্বরের মাঝে মামলার রায় হবে বলে আশা করি। বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন। তিনি বলেন, রায় কি হবে সেটা আদালতের বিষয়।

গত বছরের অক্টোবরে যুগান্তর শেখ হাসিনার পরিবারের ৬ সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। পরে এসব অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৪) রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়।

গেল বছরের ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলেমেয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট, (প্লট নম্বর ০০৯) বরাদ্দ নেন। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট তার নামে রাজউক প্লটের এ বরাদ্দপত্র দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় (প্লট নম্বর ০১৫) এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও (প্লট নম্বর ০১৭) ১০ কাঠা করে প্লট নেন। জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানাসংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের নামে বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ২০২২ সালের ২ নভেম্বর। শেখ রেহানাও ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০১৩) বরাদ্দ নিয়েছেন। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১১) এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১৯) নামে একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি মামলা করে দুদক। ১০ মার্চ ৬ মামলায় শেখ হাসিনা পরিবারের ৭ জনসহ ২৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করে দুদক। ৩১ জুলাই ৬ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত ও ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালত।

এসব মামলার আসামিরা হলেন-শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক।

শেখ পরিবার ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন-জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সওজের (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।

যে ধারায় যত সাজা : এসব মামলায় তদন্ত শেষে শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার অভিযোগ এনে আদালতে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয়।

দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ঘুস গ্রহণের সাজা ৩ বছর এবং জরিমানা, বা উভয় দণ্ড। ১৬৩ ধারায় ঘুসের প্রতিশ্রুতি/সুবিধা নেওয়ার সাজা সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। ১৬৪ ধারায় ঘুস গ্রহণে সহায়তার সাজা সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। ১৬৫-এর (ক) ধারায় সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তব্যে অবহেলার সাজা ২ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। ৪০৯ ধারায় সরকারি আমানত বা সম্পদের অপব্যবহার করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর কারাদণ্ড এবং জরিমানা। ৪২০ ধারায় প্রতারণার মাধ্যমে সম্পদ/অর্থ দখলের সাজা ৭ বছর কারাদণ্ড এবং জরিমানা। ১০৯ ধারায় অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা বা সহায়তার মূল অপরাধের সমান সাজা। এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী অসাধু উপায়ে সম্পদ অর্জন বা ক্ষমতার অপব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা, বা উভয় দণ্ডে আসামিরা দণ্ডিত হবেন।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২৪

Theme Customized By BreakingNews