1. mohib.bsl@gmail.com : admin :
  2. info@barisalerkhobor.com : editor :
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১১ অপরাহ্ন

ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্য ছিল না নেপাল সেনাবাহিনীর

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৯২ Time View

জেন-জি নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে উত্তাল ছিল নেপাল। সেপ্টেম্বর ৮ তারিখ থেকে দেশটির ৭৭টি জেলার সবখানেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাজধানী কাঠমান্ডু। ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনআস্থা ভেঙে পড়েছে জনগণের। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পাশপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পঙ্গু হয়ে গেছে। এই শূন্যতার মধ্যে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানেই জনগণের আস্থা টিকে আছে। তা হলো-নেপালি সেনাবাহিনী। বিক্ষিপ্ত কিছু গুঞ্জনও এসময় উড়ছে হিমালয়ের বাতাসে কিন্তু সত্যিটা হলো সেসময় ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্য ছিল না নেপাল সেনাবাহিনীর।

সেনাপ্রধানের সামনে ছিল তিন চ্যালেঞ্জ

বিক্ষোভের প্রথম দিন থেকেই সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেলের সামনে তিনটি প্রধান দায়িত্ব এসে দাঁড়ায়। প্রথমত, আইন ও সংবিধানের সীমার মধ্যে থেকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেলকে সহযোগিতা করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পথ তৈরি করা। তৃতীয়ত, সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ হলো- সংবিধান রক্ষা করা এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে না পড়া নিশ্চিত করা। তাদের শান্ত ও সংযত অবস্থান দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছে যে, সেনাবাহিনী পরিস্থিতি সামলাবে, তবে সংবিধানের বাইরে যাবে না।

সেনাবাহিনীর ভূমিকা কেন অপরিহার্য ছিল

এশিয়া ফাউন্ডেশনের ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, নেপালের ৯১ শতাংশ মানুষ সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখে। এই জরিপ রাজনৈতিক দল ও পুলিশের প্রতি আস্থার চেয়ে অনেক বেশি। এই আস্থার কারণে সেনাবাহিনী দুইভাবে গুরত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রথমত শান্তিরক্ষক হিসেবে; যাতে আন্দোলন অরাজকতায় না গড়ায়। দ্বিতীয়ত, সংবিধানের রক্ষক হিসেবে; যাতে ক্ষমতার শূন্যতা রাষ্ট্রকে বিপদের মুখে না ফেলে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা একটি বার্তা দিয়েছে- নেপাল চাপের মুখে থাকলেও পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি।

সেনা মোতায়েনে দুই দিনের বিলম্ব

বিতর্কের বড় একটি অংশ হলো সেনাবাহিনীকে মোতায়েনে দুইদিনের বিলম্ব। আইনি কারণেই এই বিলম্ব ঘটে। এই সময়ের মধ্যে আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়সহ গুরত্বপূর্ণ সরকারি ভবন দখল করতে সক্ষম হয়। সংবিধান অনুযায়ী, সেনা মোতায়েনের জন্য প্রেসিডেন্টের অনুমোদন এবং জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সুপারিশ প্রয়োজন। রাজনৈতিক দ্বিধা এবং বিলম্বিত সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীকে অপেক্ষায় রেখেছিল।

প্রতীকের বিতর্ক

জাতির উদ্দেশে সেনাপ্রধানের ভাষণের সময় তার পেছনে ঝুলছিল নেপালি সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহের ছবি। অনেকে এটিকে রাজতন্ত্রপন্থার ইঙ্গিত বলে ব্যাখ্যা করলেও সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি শুধুই ঐতিহ্যের প্রতীক, রাজনৈতিক বার্তা নয়।

ভবিষ্যতের পথ

ভবিষ্যতে আবারও এ ধরনের বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে। সেনাবাহিনীর তিনটি দায়িত্ব তাই আরও গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সেগুলো হলো-সংবিধান রক্ষা, জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তবে সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে- অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করলে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হবে, আবার অতিরিক্ত সংযম দেখালে রাষ্ট্র ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

লেখক: নেপাল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল, কৌশলগত বিশ্লেষক ও থাইল্যান্ডের রাংসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২৪

Theme Customized By BreakingNews