এসএসসি পরীক্ষায় যশোরের পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩২৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। কেন্দ্র থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর না পাঠানোয় এমন ঘটনা ঘটে। তিন দিন পর গতকাল রোববার সংশোধিত ফলে বিজ্ঞান বিভাগে সেই ৪৮ জনের সবাই কৃতকার্য হয়েছে। এদিকে বগুড়ায় ৮৮৩ শিক্ষার্থীর ফল বিপর্যয়ের ঘটনায় তা সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নিদিষ্ট সময়ে ব্যবহারিক বিষয়ের নম্বর বোর্ডে না পাঠানোয় একটি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে ২০-২৫ শিক্ষার্থী এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে তিন বিষয়ে ফেল এবং নড়াইলের লোহাগড়ায় এক শিক্ষার্থী এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে অন্য বিষয়ে ফেল করেছে।
যশোরের পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে এবার ছয়টি বিদ্যালয়ের ৩২৯ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিল ৪৮ জন। তাদের সবাই অকৃতকার্য হয়। ফল বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দেখেন, রসায়ন বিষয়ে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। এরপর সব স্কুল থেকে কেন্দ্র সচিবের কাছে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব মো. খানজাহান আলী ফল সংশোধনের জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে চিঠি দেন।
কেন্দ্র সচিব খানজাহান আলী বলেন, কী কারণে বিজ্ঞান বিভাগের সবার রসায়ন বিষয়ে অকৃতকার্য আসে, তারা বুঝতে পারেননি। ফল সংশোধনের আবেদন করার পর রোববার শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে ৪৮ জনের ফল সংশোধন করা হয়।
এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবদুল মতিন বলেন, কেন্দ্র থেকে রসায়ন বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর পাঠানো হয়নি। এ জন্য ৪৮ শিক্ষার্থীর ফল অসম্পূর্ণ ছিল। যে কারণে রসায়ন বিষয়ে সবার ফেল আসে। কেন্দ্রের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। রোববার তাদের ফল সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের এ ভুল বা অবহেলার জন্য কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়ায় ৮৮৩ শিক্ষার্থীর ফল সংশোধনের নির্দেশ: বগুড়া জিলা স্কুল কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ৮৮৩ শিক্ষার্থীর ফল সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ভুলক্রমে ‘ক্যারিয়ার শিক্ষা’ বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষায় ৫০ নম্বরের বদলে ২৫ নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে শিক্ষা বোর্ডে ফল পাঠিয়েছিল। পরে কেন্দ্র সচিবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে শনিবার ওই শিক্ষার্থীদের ফল সংশোধনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বগুড়া জিলা স্কুল কেন্দ্রের সব পরীক্ষার্থীর ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষায় নির্ধারিত নম্বর ৫০-এর স্থানে ভুলবশত ২৫ নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে পাঠানো হয়েছে বলে কেন্দ্র সচিব লিখিতভাবে জানিয়েছেন। ওই কেন্দ্রের সব পরীক্ষার্থীর ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের ব্যবহারিক নম্বর ২৫-এর স্থানে ৫০ সন্নিবেশিত করে সংশোধিত ফল প্রকাশের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের পর ‘ক্যারিয়ার শিক্ষা’ বিষয়ে কম নম্বর পাওয়ার বিষয়টি নজরে আসে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এরপর তারা জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তোপের মুখে পড়েন জিলা স্কুলের শিক্ষকরা। এ সময় উত্তেজিত অভিভাবকদের হাতে কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব সেলিমা নাসরিন বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ভুল হয়েছে। ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে ২৫-এর বদলে ৫০ নম্বর সন্নিবেশিত করে সংশোধিত ফল প্রকাশের জন্য শিক্ষা বোর্ডে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। শিগগির ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে বলে তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন।
এম মুরাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। শিক্ষার্থীর ফলের বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তবে ধারণা করছি, এটা দায়িত্বরত ব্যক্তির টাইপিং মিসটেক হতে পারে। তিন বছর আগে বোর্ড থেকে জানানো হয়েছিল—কোনো শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে ফেল করলে চতুর্থ বিষয়ে যদি পাস করে, পরবর্তী বছরে ফেল করা বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেও চতুর্থ বিষয়ের ফল যোগ হবে না। তবে পাস করার পরও মার্কশিটে ফেল দেওয়ার কথা নয়।
ফল নিয়ে এসব জটিলতার বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালবেলাকে বলেন, ‘ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ভুলের কারণে ফলের ঝামেলা হয়েছে—এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে বিভিন্ন বোর্ডে ঘটেছে, সেটি জেনেছি। যেসব বোর্ডে এ ধরনের ভুল হয়েছে, তা সংশোধনের টেকনিক্যাল যে কোনো ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হলে আমরা দিয়ে থাকি।’