খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংক খাত এবং অর্থনীতির জন্য মারাত্মক এক ব্যাধি হলেও এর নিরাময়ে সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না। জানা যায়, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দেয়নি থার্মেক্স গ্রুপ। বাধ্য হয়ে ঋণটি ফোর্সড লোনে রূপান্তর করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক।
সময়মতো ঋণ ফেরত না দেওয়ায় রূপালী ব্যাংকে খেলাপি হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এখানেই শেষ নয়। সেই ঋণ বিশেষ বিবেচনায় পুনঃতফশিল করে দায় পরিশোধের সময় বৃদ্ধি করেছে রূপালী ব্যাংক। উল্লেখ্য, রপ্তানিকারকদের সহায়তায় ১৯৮৯ সালে গঠন করা হয়েছে ইডিএফ। যারা এ ফান্ড থেকে ঋণ নিয়েছেন, তাদের অনেকেই ফেরত দিতে পারছেন না ডলারে নেওয়া এসব ঋণ। এতে বিপাকে পড়েছে রূপালীসহ আরও কিছু ব্যাংক। রিজার্ভ থেকে গঠিত ইডিএফ থেকে থার্মেক্স গ্রুপকে ৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলেও তা শোধ করতে পারেনি গ্রুপটি। বাধ্য হয়ে থার্মেক্স গ্রুপের নামে সুদে-আসলে ৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ফোর্সড লোন সৃষ্টি করেছে ব্যাংকটি।
বর্তমানে মাসিক কিস্তিতে আগামী ছয় মাসে এ ঋণ পরিশোধের আবেদন করেছে থার্মেক্স। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি চেয়েছে রূপালী ব্যাংক। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ঋণ ছাড়াও থার্মেক্স গ্রুপের অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের আরও ঋণ রয়েছে, যা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দিতে না পারলে মন্দমানে খেলাপি করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটাল বা মূলধন ২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। বিধিমতে, কোনো একক গ্রাহক বা গ্রুপকে ৫৫৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই এ ব্যাংকের।
জানা যায়, রূপালী ব্যাংক থেকে থার্মেক্স গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার আশপাশে ছিল। কিন্তু এতদিন একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করেনি। নতুন করে ৮৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা যুক্ত হয়ে ঋণের সমষ্টি একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী অনৈতিক ও অনিয়ম। কোনো ব্যাংক নিয়মবহির্ভূতভাবে ফোর্সড লোন তৈরি করে কি না, ব্যাংকগুলো সব বিধিবিধান সঠিকভাবে পালন করে কি না, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত তা নিখুঁতভাবে খতিয়ে দেখা। খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর না হলে এ ধরনের সমস্যা আরও বাড়বে।
Leave a Reply