দেশে প্রচলিত বেশকিছু অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা অনেকাংশে হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এ কারণে শিশু এবং হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কোনো কোনো রোগীর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। বস্তুত বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক রোগ নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখলেও এর অপব্যবহার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইতোমধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। জানা যায়, দেশে অন্তত ২১ ধরনের সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। যেহেতু এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মানুষের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর, সেহেতু এর অপব্যবহার রোধ করতে হবে। মানুষকেও এর ব্যবহারে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। সম্প্রতি দেশের সরকারি ৮টি মেডিকেল কলেজ এবং ৪টি বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট হাসপাতাল থেকে নানা বয়সি রোগীর সংগৃহীত নমুনা গবেষণা করে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহারের কারণে মানবদেহে ওষুধ অকার্যকর করার অণুজীবের উপস্থিতি দেখা গেছে।
মানুষের যেসব ভুলের কারণে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পায়, তা নিয়ে বহু আলোচনা হলেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। অসচেতনতার কারণে অনেকে বিনা প্রেসক্রিপশনে ঘনঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। অনেকে কোর্স শেষ না করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করে দেন, যার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারায়। গরিব মানুষ অর্থের অভাবে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে পাড়ার ওষুধের দোকানে কর্মরত লোকদের পরামর্শে ঘনঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে। গরিব মানুষ যাতে স্বল্প অর্থের বিনিময়ে বা বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে, সে ব্যবস্থা করা দরকার। তা না করে যত প্রচারকার্যই চালানো হোক, মানুষ ক্ষতি হবে জেনেও বারবার পাড়ার ওষুধের দোকানে কর্মরত লোকদের শরণাপন্ন হবে।
প্রতিদিন আমরা যেসব খাবার খাই, সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা না হলে এ সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধ তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেললে কম জটিল রোগেও মানুষের মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হতে পারে। জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য কারণেও বিভিন্ন জীবাণুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। নিম্ন-আয়ের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ক্ষতি হবে জেনেও তারা বারবার একই ভুল করবে।
Leave a Reply