বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ ঢাকায় বসবাস করছে এবং প্রতি বছর নগরীতে নতুন ৫ লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং বাংলাদেশের টেকসই নগরায়ণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, শহরমুখী মানুষের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫১ সাল নাগাদ দেশের মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশই শহরে বসবাস করবে। এর আগে, ২০২২ সালে সবশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেই ছিল ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৫ জন।
এসব পরিসংখ্যান আমাদের চিন্তায় ফেললেও সংকট থেকে উত্তরণে সরকারি-বেসরকারি কোনো পক্ষের তরফেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। শহরে আয়ের সুযোগ থাকায় নিুবিত্তদের কেউ কেউ গ্রামাঞ্চল থেকে যেমন শহরমুখী হয়, তেমনই স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো রাজধানীতে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য জেলা শহরে না থাকায় ঢাকা অনেকেরই আকর্ষণ ও প্রয়োজনের জায়গা। অধিক মানুষ শহরমুখী হওয়ায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে একদিকে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত পানি ও বায়ুদূষণ, অধিক তাপমাত্রা, জলাবদ্ধতা, যানজট ও স্বাস্থ্য সংকটের শিকার হতে হচ্ছে; অপরদিকে এত মানুষের সমাগমের কারণে রাজধানীতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে আর সবুজের পরিমাণ কমছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, শহরে ২৫ শতাংশ সবুজের প্রয়োজন হলেও ঢাকায় আছে মাত্র ৮ শতাংশ।
বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের সবকিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। এর থেকে বের হতে না পারলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। ফলে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ঢাকার বাইরেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের বিকল্প নেই। আবার গ্রাম উন্নয়নে শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, জীবনযাপনে সব প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিস্তার ঘটাতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের, যেন গ্রামের মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়। আবার ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট যানজট, পানি ও বায়ুদূষণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা ও নীতিও গ্রহণ করতে হবে। টেকসই নগরায়ণ ও শহর বিকেন্দ্রীকরণে যথাযথ বাস্তবায়নে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিকল্প নেই।
Leave a Reply