বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম মুরতজা আবেদীনের ওপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালিয়েছেন মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্না। তিনি সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর পোর্ট রোডে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ফজলুল করিম। তিনি বলেন, অস্ত্রটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর থানায় এসেছেন। আমরা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি।
এ ঘটনার দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিও ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মুরতজা আবেদীনের। অপরটি ছিনতাইচেষ্টাকারী রইজ আহম্মেদ মান্নার সহযোগীদের। এর মধ্যে মুরতজা আবেদীনের করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ভূমি অফিস থেকে মুরতজা আবেদীন বের হওয়ার সময় অফিসের সামনে রইজ আহম্মেদ মান্না ও তার অনুসারীরা পাঁয়চারী করছে।
মুরতজা আবেদীন তাদের অতিক্রম করে সড়কে এসে একটি ইজিবাইকের অপেক্ষা করেন। ইজিবাইক পেয়ে গেলে তাতে উঠে বসেন। তখন রইজ আহমেদ মান্না মুরতজা আবেদীনকে তুই সম্মোধন করে অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করেন। এর প্রতিবাদে মুরতজা আবেদীন বলেন, তুই আমার ভাইয়ের ছেলে। বয়সে ছোট। সেই অনুসারে কথা বল। তখন মান্না গালিগালাজ করতে করতে বলেন, তোর কান মলে দেব। এভাব তর্কে জড়িয়ে ইজিবাইকে বসে থাকা মুরতজা আবেদীনের ওপর হামলা চালান। এ সময় মুরতজা আবেদীন তার সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করলে তা মান্না ও তার সহযোগীরা মিলে ছিনিয়ে নেন।
এদিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অপর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইজিবাইকের মধ্যে মান্না ও মুরতজার মধ্যে ধস্তাধস্তি হচ্ছে পিস্তল নিয়ে। মান্না বলছেন- তোরা ভিডিও কর। আমাকে গুলি করতে পিস্তল বের করছে। ভিডিও কর।
ঘটনার সময়ে উপস্থিত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর শফিক আহমেদ বলেন, ভূমি অফিস থেকে অস্ত্র হাতে মুরতজাসহ দুইজন দৌড়ে এসে একটি হলুদ অটোর মধ্যে ঢুকে পড়েন। এ সময় কিছু লোকজন অস্ত্রসহ মুরতজাকে ধরে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ অস্ত্র ও কাউন্সিলরকে হেফাজতে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাউন্সিলর মুরতজা আবেদীনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর তার ওপর পুনরায় হামলা চালান মান্নার অনুসারীরা। এই নিয়ে পুলিশের এসআই রাকিবের সঙ্গে বেশ উচ্চবাচ্চ হয় মান্না ও তার অনুসারীদের।
স্টিমার ঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পৌঁছানোর আগেই কাউন্সিলরের ওপর হামলা করা হয়। পরে আমরা তাকে হেফাজতে নেওয়ার পরও উত্তেজনা থামেনি।
কাউন্সিলর একেএম মুরতজা আবেদীন বলেন, আমার ওপর হামলা হতে পারে সেটা আমি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম আগে থেকেই। কেননা বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই আমাকে ফলো করছিল ওরা। ভূমি অফিস থেকে বের হওয়ার পর পরই আমার ওপর হামলা চালায় মান্নার লোকজন। এ সময় আমার কাছে থাকা লাইসেন্সকৃত পিস্তল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে মান্না।
রইজ আহম্মেদ মান্না বলেন, আমি পারিবারিক জমির কাজে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে যাই। কাজ শেষে বের হয়ে গেটে আসা মাত্র মুরতজা আবেদীন আমাকে গালিগালাজ করে। এর প্রতিবাদ করলে হঠাৎ পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হয়।
প্রসঙ্গত, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মুরতজা আবেদীনের অভিযোগের কারণে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা হারান রইজ আহম্মেদ মান্না। কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে এই দুইজনের সমর্থকদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কর্মীদের মারধর ও অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ায় ১৩ জনসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রইজ আহমেদ মান্না। মূলত তিনি মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ানের মোটরসাইকেল চালক ছিলেন।
Leave a Reply