বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলছে।
এর প্রভাবে রোববার সকাল থেকে কক্সবাজারে হালকা বাতাস এবং বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ এখন উপকূলে আছে। অনেক দূরে এটির মূল কেন্দ্র রয়েছে। যেটি আঘাত হানতে পারে আজ (রোববার) দুপুরের পর থেকে বিকালের মধ্যে। ফলে ৮-১২ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এতে করে পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে সেন্টমার্টিন।
এদিকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার নমনীয় আচরণের কারণে অনেকে এটিকে পাত্তা দিচ্ছেন না। এ কারণে কক্সবাজারের উপকূলে অনেক বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্র যাননি। অন্যদেরও বসতি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করছেন তারা।
উপকূলীয় বাসিন্দা আবদুর রহমান, আবুল কাশেম ও জানে আলমের যুক্তি— আগে যেসব ঘূর্ণিঝড় দেখেছেন, তার প্রভাবে এক থেকে দুদিন আগে থেকে প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিপাত হতো। যেমনটি সিডর, আইলা, নার্গিস ও চিত্রাংয়ের বেলায়ও হয়েছে।
কিন্তু মোখার ভয়াবহতা ১৯৯১ সঙ্গে তুলনা করা হলেও সে রকম কোন পরিবেশের সৃষ্টি হয়নি। শনিবার রাত পর্যন্ত কক্সবাজারের উপকূলে সমুদ্রের পানি যেমন স্বাভাবিক ছিল, তেমনি বাতাসে গাছের পাতাও নড়েনি বললে চলে।
তবে যে কারণে মানুষ ভয়হীন সেটিকে সবচেয়ে ভয়ের কারণ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
কক্সবাজারের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান যুগান্তরকে জানান, আগেভাগে বাতাস ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণ হচ্ছে মোখা তার শক্তি ধরে রেখেছে। তাই মোখা যতক্ষণ থাকবে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে ভয়ংকর তাণ্ডব চালাবে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যখন এক দুইদিন আগে থেকে বাতাস এবং বৃষ্টিপাত হবে তখন তার শক্তি কমে আসবে। তখন ঘুর্ণিঝড় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা স্থায়ী হলে শক্তি কমে যাওয়ার কারণে আঘাত আনতে পারে সীমিত। কিন্তু মোখা তার সর্বোচ্চ শক্তি ধরে রেখেছে এখনও।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা খুব কাছ থেকে দেখেছেন ঈদগাঁও এর উপকূলীয় এলাকা গোমাতলীর বাসিন্দা মো. আলমগীর ও বশির আহেমেদ।
তারা বলেন, ‘৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের আগমুহুর্ত পর্যন্ত বাতাস বা বৃষ্টিপাত ছিল না। কিন্তু হঠাৎ পানি এসে পুরো উপকূল লণ্ডভণ্ড করে দেয়। মারা যান প্রায় ২ লাখ মানুষ।
তারা আরও বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যে ঘূর্ণিঝড় বেশি আঘাত করবে, সেটির আঘাত করার আগে বেশি প্রভাব বিস্তার করবে না। অর্থাৎ আগভাগে বৃষ্টিপাত বা বাতাস হবে না।
তিনি ঘূর্ণিঝড় মোখার সঙ্গে ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোনের মিল দেখতে পাচ্ছেন। তাই কোনোভাবেই ঘূর্ণিঝড়কে অবহেলা চোখে না দেখার অনুরোধ তাদের।