কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় অপরাধের প্রবণতা কমছেই না। গত রোববারও উখিয়া উপজেলার পালংখালীতে ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে তিন রোহিঙ্গা আহত হন। পরে সংঘবদ্ধ রোহিঙ্গাদের গণপিটুনিতে হামলাকারী এক আরসা সন্ত্রাসী নিহত হয়। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা গোষ্ঠীসহ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকার বরাবরই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর করলেও পরবর্তী সময়ে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
জানা যায়, ইয়াবা, মানবপাচার ও হাটবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। চলছে অস্ত্রের মহড়াও। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত রোববার পর্যন্ত কমপক্ষে ২১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি পাহাড়ে আস্তানা গেড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অপহরণের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক, সেটা চায় না সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। তাই প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা শুরু হলেই রোহিঙ্গা শিবিরে বেড়ে যায় সন্ত্রাসী তৎপরতা। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যাতে বাস্তবায়িত না হয়, সেজন্য বিভিন্ন ক্যাম্পের মাঝি বা নেতাদের টার্গেট করছে আক্রমণকারীরা। এ কারণে রোহিঙ্গা নেতাদের অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিবিরের বাইরে নিরাপদ জায়গায় বাসা ভাড়া করে থাকছেন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি চীনের চাপের কারণে মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসাবে গত ৮ মার্চ মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও আসিয়ানের কয়েকটি দেশসহ আট দেশের কূটনীতিকদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ দেশের ১১ কূটনীতিককে মিয়ানমারের মংডু ও সিটওয়ে শহরে অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকাও দেখানো হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।