আগামী মাসে (এপ্রিল) চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের জোগান অনেকটাই কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। খোদ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তীব্র গরম, পবিত্র রমজান ও সেচের কারণে এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক।
এ সময় বিদ্যুতের ঘাটতি থাকা মানে লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়া। আর লোডশেডিং বৃদ্ধি পেলে বাড়বে রোজাদারদের কষ্ট। ব্যাহত হবে শিল্পকারখানার উৎপাদন। কৃষি উৎপাদনেও পড়বে এর প্রভাব। সব মিলে আগামী মাসের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
এ প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের লোড ম্যানেজমেন্টটা দক্ষতার সঙ্গে করা উচিত বলে মনে করি আমরা, যাতে রোজাদারদের কষ্ট এবং কৃষি ও শিল্প খাতে ক্ষতি কম হয়।
জানা যায়, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে ফিরেছে। এর আগে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এলএনজি আমদানি কমানো হয়েছিল। এতে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এদিকে কয়লা আমদানির ধারাবাহিকতা সাপেক্ষে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মোট ১৮০০ থেকে ১৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসতে পারে। আর মাতারবাড়ী ও বরিশালের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০০ থেকে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপের উৎপাদিত ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু এরপরও থেকে যাবে ঘাটতি। বস্তুত দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সংকটের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতা। গ্যাসের অনুসন্ধানে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হলে জ্বালানি খাত এতটা নাজুক পরিস্থিতির মুখে পড়ত না। দেশে বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থায়ও সমস্যা রয়েছে। অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের অবস্থা বেহাল ও জরাজীর্ণ।
গত বছর সঞ্চালন লাইনে বড় ধরনের বিভ্রাটের কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সঞ্চালন ও বিতরণের দুর্বলতা কাটেনি। সঞ্চালন লাইন শক্তিশালী না হলে আগামী দিনে দেশবাসী বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হবে।
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া না গেলে শিল্প খাত সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হবে। অন্যদিকে কৃষি খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা না হলে খাদ্যপণ্যের আমদানিনির্ভরতা বেড়ে যাবে। তাই এ দুই খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।