1. mohib.bsl@gmail.com : admin :
  2. h.m.shahadat2010@gmail.com : Barisalerkhobor : Barisalerkhobor
শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৭:১৮ অপরাহ্ন

অমর একুশে: আমাদের জাতীয় জীবনে এক অন্তহীন প্রেরণার উৎস

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৪ Time View

মহান শহিদ দিবস আজ। একই সঙ্গে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও পালিত হবে বিশ্বজুড়ে। আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন এটি। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর থেকেই পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের শাসকগোষ্ঠী পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিকে তাদের অধীন করে রাখার পরিকল্পনা করেছিল। এর অংশ হিসাবে প্রথমেই তারা বাঙালিদের ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাই হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা-এ বাস্তব সত্য অস্বীকার করে বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল তারা। উদ্দেশ্য ছিল মাতৃভাষা কেড়ে নিয়ে বাঙালির জাতিসত্তাকে পঙ্গু করে দেওয়া। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে বাঙালি। শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এরই এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভরত ছাত্র-জনতার ওপর চালানো হয় গুলি। শহিদ হন বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারসহ অনেকে।

বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে যোগ করে নতুন মাত্রা। শহিদদের রক্ত তাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে প্রেরণা জোগায়। এর পরের ইতিহাস পর্যায়ক্রমিক আন্দোলনের। চুয়ান্নর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভ এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাঙালির স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাঙালি মুক্ত হয় ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে। বাঙালির স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। তাই একুশ আমাদের জাতীয় জীবনে এক অন্তহীন প্রেরণার উৎস।

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অর্ধশত বছর পেরিয়ে এসেছি আমরা। এ দীর্ঘ সময়ে আমাদের অর্জন কী-এ প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে আমরা একুশের শহিদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা দেখাতে পারছি কি না। দেশ অনেকটাই এগিয়েছে বলা যায়। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যেসব তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, সেগুলোর কি নিষ্পত্তি করতে পেরেছি আমরা? বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে সত্য; কিন্তু তা কি চালু করা সম্ভব হয়েছে সর্বস্তরে? একুশের অন্যতম চেতনা ছিল রাষ্ট্রীয় জীবনে অসাম্য-বৈষম্য, দুর্বলের ওপর সবলের আধিপত্য প্রভৃতির অবসান। এই মহৎ আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটেছে কি? বাঙালির ঐতিহ্য, কৃষ্টি, আবহমানকালের সংস্কৃতি প্রভৃতি সমুন্নত রাখার ঐক্যবদ্ধ সমন্বিত প্রচেষ্টা কি লক্ষ করা যাচ্ছে সমাজে? চিন্তার দিক থেকে আমরা হব আন্তর্জাতিক; কিন্তু পরিচয়ে থাকব বাঙালি-এই ধারায় কি যাপন করছি জীবন? এসব প্রশ্নের উত্তর সন্তোষজনক নয়। বিতর্ক রয়েছে, বিশ্বায়নের যুগে ভিন্ন সভ্যতা, ভিন্ন সংস্কৃতির যে অবাধ প্রবাহ, তাতে আমরা অবগাহন করব কি না। আকাশ সংস্কৃতির ফলে ভিনদেশের যেসব বিষয় আমাদের বিনোদিত করে, সেগুলো আমরা গ্রহণ করব কি না। এ বিতর্কের মীমাংসা হতে পারে বিষয়টিকে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচারের মাধ্যমে। প্রথমত, আমরা যেহেতু বাঙালি, সেহেতু বাঙালিত্বকে সমুন্নত রাখতে হবে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র একটি জাতি হিসাবে নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রেখেই ভিন্ন সংস্কৃতি-কৃষ্টির সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া ঘটাতে হবে। ভাষার প্রশ্নে বলতে হয়-আমাদের জীবন চলবে মাতৃভাষার মাধ্যমে। তবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য শিখতে হবে সাধ্যমতো অন্য ভাষাও।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর অর্থ পৃথিবীর সব মাতৃভাষাই স্ব-স্ব জাতির নিজস্ব ও অপরিবর্তনযোগ্য ভাষা। সব মাতৃ ও আঞ্চলিক ভাষাকেই সমান মর্যাদা দিয়ে সংরক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে বিশ্ববাসীর। একুশের শহিদদের প্রতি জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। শহিদ স্মৃতি অমর হোক।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ
© All rights reserved © 2023
Theme Customized By BreakingNews
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com