শেখ মুহাম্মাদ আবু জাফর
মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তা দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি.) এক সরকারি নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই নতুন আইনের শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।
জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লেইং গত বছর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেছিলেন, ২০২৩ সালের আগস্টে পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে মিয়ানমারে। শুক্রবার নতুন যে আইনটি পাস করেছে জান্তা সরকার, সেটি মূলত আগামী নির্বাচনকে ঘিরে।
মিয়ানমার সরকার প্রবর্তিত নতুন আইনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে ৬০ দিনের মধ্যে জান্তা সমর্থিত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন করতে হবে। আর নিবন্ধনের ৯০ দিনের মধ্যে দলগুলোকে অবশ্যই অন্তত ১ লাখ সদস্য সংগ্রহ করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। একই সঙ্গে ১৮০ দিনের মধ্যে মিয়ানমারের অন্তত অর্ধেক শহরে দলীয় কার্যালয় খুলতে হবে।
কোনো রাজনৈতিক দল যদি এসব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই দলকে আগামী আগস্টের নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
অবশ্য, মিয়ানমারের বর্তমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে কীভাবে বিভিন্ন প্রান্তের শহরগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য সংগ্রহ এবং কার্যালয় খোলার বিষয়টি যাচাই করা হবে, তা নতুন আইনে পরিষ্কার করা হয়নি।
বিগত ২০১৫ ও ২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেতৃ অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি); কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সামরিক বাহিনী অভিযোগ তোলে— ভোটে কারচুপি করা হয়েছে।
মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন তদন্ত করেও সেনা বাহিনীর অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন।
অভ্যুত্থানের দিনই বন্দি করা হয় অং সান সুচিকে। পরবর্তী মাসগুলোতে এনএলডির প্রথম সারির প্রায় সব নেতা ও এমপিদের বন্দি করে কারাগারে পাঠায় জান্তা।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জেষ্ঠ্য উপদেষ্টা রিচার্ড হোরসি পেশাগত প্রয়োজনে এক সময় টানা ১৫ বছর মিয়ানমারে ছিলেন। রয়টার্সকে তিনি জানান, শুক্রবার যে আইনটি পাস করেছে জান্তা সরকার, সেটির মূল লক্ষ্য সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গঠিত রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া এবং দেশটির অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে দমন করাই এর উদ্দেশ্য।