মহা. সফিক খান, বাকেরগঞ্জঃ
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নে পান্ডব নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে পশ্চিম নলুয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ ও বসতবাড়ীসহ হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি।
শুকনো মৌসুমে পান্ডব নদীর পানি কমতে শুরু করায় ভাঙ্গন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে নলুয়া ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের উত্তর নলুয়া, পশ্চিম নলুয়া ও দক্ষিণ নলুয়া তিনটি গ্রামের হাজার হাজার পরিবারের মধ্যে ভাঙ্গন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর এভাবে ভাঙতে থাকলে অচীরেই এই ইউনিয়নের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
পশ্চিম নলুয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল সালাম খান জানান, নলুয়া ইউনিয়নের তিন গ্রামের শত-শত বসতবাড়ী পান্ডব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এই তিন ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার একর ফসলি জমি নদী গর্বে বিলীন হয়েছে। নলুয়া পাতাবুনিয়া খেয়াঘাট থেকে কলসকাঠী আমতলী খেয়াঘাট যেতে পশ্চিম নলুয়া বেড়িবাঁধ প্রায় ৩ কিলোমিটার পান্ডব নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে হারিয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হয় চরম ভোগান্তির। রাস্তাঘাট না থাকায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলে গবাদি পশুসহ হাঁস-মুরগী আর মানুষ একসাথে বসবাস করে তখন সাইক্লোন শেল্টারে। বর্ষা মৌসুমে চরম ঝুঁকিতে পড়ে এই তিন গ্রামের হাজার হাজার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তখন মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন হয় নৌকা।
সরেজমিনে দেখ যায়, পান্ডব নদীর পারে গড়ে ওঠা উত্তর নলুয়া, পশ্চিম নলুয়া, দক্ষিণ নলয়া ৩টি গ্রাম ভাঙ্গনের মুখে। যে কোনো মুহূর্তে শত শত বসত বাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীর তীরবর্তী মানুষদের। নলুয়া পাতাবুনিয়া খেয়াঘাট থেকে কলসকাঠী আমতলী খেয়াঘাট যেতে পশ্চিম নলয়া বেড়িবাঁধটি দিয়ে প্রতিদিন দুমকি উপজেলার জলিশা, পাতাবুনিয়া, বাহেরচর গ্রামসহ নলুয়া ইউনিয়নের ৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন কলসকাঠী হয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহরে যাতায়াত করেন। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে উঁচু নিচু আর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে জনসাধারণ চলাচল করতে গিয়ে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালেয়া বেগম জানান, পান্ডব নদীর তীব্র ¯্রােতে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। তিন গ্রামের দুই শতাধিক বসতবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীতে গেছে। এতে এই এলাকার অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বাজারে, নদীর পাড়ে, রাস্তার পাশে বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন। নলুয়া পাতাবুনিয়া খেয়াঘাটের বাজারে রয়েছে অন্তত শতাধিক দোকানপাট যা নতুন করে আবারও ভাঙনের কবলে।
উত্তর নলুয়া গ্রামের কুদ্দুস হাওলাদার জানান, প্রায় এক যুগ আগে থেকে পান্ডব নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে সড়ক বসত বাড়ীসহ ফসলি জমি। সরকারি ভাবে ভাঙ্গন রোধে নেই কোনো কার্যকরী ব্যাবস্থা। অনেক পরিবার ভিটে মাটি হারিয়ে পথে বসেছেন। এখন বেরিবাঁধ ভেঙে বর্ষা মৌসুমে লোকালয়ে পানি চলে আসে। কৃষি কাজ সঠিক ভাবে হচ্ছে না। অব্যাহত ভাঙন রোধ করা না হলে খুব কম সময়ে পশ্চিম নলুয়া গ্রাম নদীতে চলে যাবে।
নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ.স.ম. ফিরোজ আলম খান জানান, ভাঙ্গন রোধে বড় ধরনের বরাদ্দ দরকার। না হলে আমাদের ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডে আমি লিখিত আবেদন করেছি। আমি আমার সাধ্যমত প্রচষ্টা চালাচ্ছি। আগে নদী ভাঙ্গন রোধ করা দরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি যাতে আমাদের ইউনিয়নটি নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পায় এবং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. রাকিব হোসেন জানান, পান্ডব নদী ভাঙ্গন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।