দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত, আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য এক বিশেষ আমানাত ও নিয়ামত প্রত্যেক নবীর সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে তাবলিগ ও দাওয়াত। মহান প্রভু আল্লাহতায়ালা তাঁর কাছে যে মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা মানব জাতির কাছে প্রচার করা, এর প্রতি তাদের আহ্বান করা সব নবীর অন্যতম কর্তব্য। মহানবী (সা.) এ দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন।
আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীগণের প্রতি প্রদত্ত বিধান পৌঁছে দেওয়া ও মানবজাতির কাছে তা প্রচার-প্রসার করাই তাবলিগ। তাবলিগ শব্দটি আরবি। আরবি ভাষায় তাবলিগ শব্দের সমার্থবোধক আরও বেশ কয়েকটি শব্দ রয়েছে। কুরআনুল কারিমে উল্লেখ রয়েছে এমন কয়েকটি শব্দ ‘ইনজার’ (সতর্ক করা) ‘দাওয়াত’ (আহ্বান করা) এবং ‘তাজকির’ (স্মরণ করিয়ে দেওয়া বা উপদেশ দান করা)। উল্লেখিত যাবতীয় শব্দের মাধ্যমে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) কে কুরআনে কারিমে আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনকে মানবজাতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আনীত ধর্ম বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন। এ ধর্মে জাত, গোষ্ঠী ও বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই। নেই ভৌগোলিক কোনো সীমারেখা। তাই বিশ্বনবী (সা.) এর দাওয়াতি কার্যক্রম এবং তাবলিগের পরিমন্ডল ছিল বিশ্বব্যাপী। আর তিনি ছিলেন গোটা জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ। মহান আল্লাহ পর্যায়ক্রমে তাঁকে বিশ্বব্যাপী তাবলিগের নির্দেশনা প্রদান করেন। সর্বপ্রথম আপনজনদের এ পথে আহ্বান করার নির্দেশ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর আপনি নিকটতম পরিবার পরিজনকে সতর্ক করুন।” (সুরা শুয়ারা-২১৪)।
এক পর্যায়ে মহান আল্লাহতায়ালা এ ধর্মের প্রচার-প্রসার সমগ্র মানবজাতি পর্যন্ত বিস্তৃত করার ঘোষণা করেন, “আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” (সুরা সাবা-২৮)।
অপর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, “হে রসুল! বলুন হে মানবমন্ডলী, আমি তোমাদের সবার জন্য প্রেরিত রসুল।” (সুরা আল আরাফ- ১৫৮)।
মহানবী (সা.) দেশ ও জাতি নির্বিশেষে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব অবিরাম ক্লান্তিহীনভাবে চালিয়ে যান। সীমাহীন জুলুম অত্যাচার ও দুর্ভেদ্য প্রতিকূলতা এড়িয়ে বিশ্বশান্তির এ বার্তা তিনি ছড়িয়ে দেন বিশ্বব্যাপী। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি হজ মৌসুমে আরবের বিভিন্ন গোত্রে গমন করে ইসলামের আহ্বান পৌঁছে দেন। ওই সময়েই তাঁর আহ্বান ইয়েমেন ও আবিসিনিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়। মক্কাবাসী তাঁর দাওয়াতি কাজে বাধার পাহাড় গড়ে তোলে। সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি আল্লাহ প্রদত্ত দাওয়াতি মিশনে মহান বিজয় লাভ করেন। তখন তিনি আরও পূর্ণোদ্যমে আরব ও অনারবে দাওয়াতি কাজে প্রতিনিধি এবং রাজা-বাদশাহদের প্রতি ইসলামের দাওয়াত সংবলিত চিঠিপত্র ও দূত প্রেরণ করেন। ফলে সত্যানুসন্ধিৎসু লোকজন ব্যাপকভাবে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। মহান আল্লাহ বলেন, “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।” (সুরা আন নাসর-১-২)।
নবী রসুল আগমনের ধারা সমাপ্ত হয়েছে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর আগমনের মাধ্যমে। তবে ইসলাম ধর্মের এ চিরশান্তির পয়গাম কেয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে। চালু থাকবে এর অবিনশ্বর দাওয়াতি কার্যক্রম। মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতিটি মানুষের উপর অর্পণ করেছেন ইসলাম প্রচারের এ মহৎ কাজ। যা এ উম্মতের জন্য একটি অন্যতম মর্যাদার প্রতীক। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে, তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দেবে। (সুরা আল ইমরান-১১০)।
বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার টুঙ্গি এলাকার তুরাগ তীরে আগামী ২০ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি. থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। ইতোমধ্যেই দেশ বিদেশের লাখো জনতার পদভারে মুখরিত ইজতেমা ময়দান। আখেরী মুনাজাত শেষে জামাত বদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত সহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরবে লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হবে বিশ্বনবী (স.) এর অমিয় বাণী “হে মানব মণ্ডলী, তোমরা যদি সফল হতে চাও তাহলে বলো লা – ইলাহা ইল্লাল্লাহ “। (মুসনাদে আহমদ)।
লেখক
মাওলানা শেখ মুহাম্মাদ আবু জাফর
shekhabouzafor@yahoo.com