শেখ মুহাম্মাদ আবু জাফর
দক্ষিণ বাংলার বিখ্যাত সমাজ সেবক, ধর্মীয় নেতা, কলসকাঠীর হিন্দু জমিদার বাবু রাজেশ্বর রায় চৌধুরীর আতংক আলহাজ্ব হজরত মাওলানা শেখ সেলিম উদ্দীন ছলু হাজী ( রহ.) এর নাম কালের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। খেটে খাওয়া মেহনতী গরীব প্রজা সাধারণের ভাগ্যের উন্নয়নে তিনি আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের ঘোর বিরোধী ছিলেন। হিন্দু জমিদারকে তিনি তার জীবদ্দশায় খাজনা দেননি। তিনি বলতেন আল্লাহর জমিনে বাস করে আল্লাহ বিরোধীকে খাজনা দিবোনা। তাইতো মৃত্যুর পরে তার সকল সম্পত্তি নিলাম করা হয়েছিল।
এই মহাপুরুষের জন্ম তৎকালীন অখণ্ড বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলায় ১৮৩০ খ্রি. এর জানুয়ারি মাসে। নিজ বাড়ির মক্তবে বাল্যশিক্ষা লাভের পরে কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে ১৮৫৪ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে পিতামহ আলহাজ্ব শেখ মোঃ ইয়াসিন (রহ.) ও পিতা আলহাজ্ব শেখ মোঃ ইদ্রাক (রহ.) এর সাথে পবিত্র হজ্বে গমন করেন। সেখান থেকে ফিরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পরে ব্রিটিশ সরকারের গ্রেফতার এড়াতে পিতামহ, পিতা ও ছোট ভাই আলহাজ্ব শেখ বলিউদ্দীন ( রহ.) সহ ভাটি এলাকা তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের বাখরগঞ্জ জেলার কলসকাঠীর চৈনগরে বসতি স্থাপন করেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পরে গারুড়িয়ার মেউর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। কথিত আছে, শালিস বৈঠকে তিনি যেতে না পারলে তার গদা ( লাঠি) ছাড়া বৈঠক হতোনা। জীবদ্দশায় তিনি মোট ৫ বার হজ্জব্রত পালন করেন। ১৯২৫ সালের জানুয়ারি মাসের ২য় শুক্রবার রাতে ৯৫ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তিনি ৩ পুত্র যথাক্রমে আলহাজ্ব হজরত মাওলানা শেখ আবদুল কাদের ( রহ.), শেখ আবদুল গফুর(রহ.), শেখ আবদুল খবির(রহ.) ও ১ জন কন্যা সন্তান সহ অসংখ্য ভক্ত মুরীদ রেখে গেছেন। এই মহান সাধক চার তরিকার কামেল পীর ছিলেন।
এই মহাপুরুষের বসত ভিটার কোনো অস্তিত্ব আজ আর নেই। তবে তার নামে একটি মসজিদ ” আলহাজ্ব শেখ সেলিম উদ্দীন মসজিদ কমপ্লেক্স ” ও একটি মাদ্রাসা “জামেয়া ইসলামিয়া শেখ সেলিম উদ্দীন” এবং “বাৎসরিক ঈসালে সওয়াব মাহফিল” তাঁর স্মৃতি বহন করে চলছে। অবশ্য মাহফিলটি করোনা মহামারী ও বিরূপ পরিস্থিতির কারনে কয়েক বছর যাবত অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা।
ইন্তেকালের পরে তাঁর বড় সাহেবজাদা আলহাজ্ব হজরত মাওলানা শেখ মোঃ আব্দুল কাদের (রহ.) ১৯৪৪ সালে শাহাদতের পূর্ব পর্যন্ত গদীনশীন পীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ আব্দুল কাদের (রহ.) এর মোট চার ছেলে যথাক্রমে শেখ মোঃ আব্দুর রশিদ, উকিল শেখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ্ (আবদুস সাহেদ), শেখ মোঃ আব্দুল মুক্তাদির ও শেখ মোঃ আব্দুস সাত্তার (রহ.)। আলহাজ্ব মাওলানা শেখ মুহাম্মাদ আবদুল কাদের (রহ.) এর পরে তার বড় ছেলে হজরত শেখ মোঃ আব্দুর রশিদ ১৯৮৫ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত গদীনশীন পীর ছিলেন। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীর পর্যন্ত তাদের অসংখ্য মুরীদ ছিলো। যা আজ শুধুই এক ইতিহাস।
শেখ মুহাম্মাদ আবু জাফর shekhabouzafor@yahoo.com