বর্তমানে দেশের প্রায় সবখানেই ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। অথচ সেই আলুর এক গোলা (হাতের এক মুঠো) ভর্তা হোটেলে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে। যা খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাজারে প্রতিটি জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। বিশেষ করে দিনমজুররা হোটেলে খেতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। এক প্লেট সাদা ভাত ও আলু ভর্তা দিয়ে খেতে গেলেও গুনতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ছিল ১০-১৫ টাকা।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সরেজমিনে বরিশালের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। অথচ সেই আলুর তৈরি ভর্তা কিছু দিন আগে নগরীর হোটেলগুলোতে ৫ টাকা করে বিক্রি হলেও এখন ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর সদর রোডের বিবিরপুকুর পাড়ের একটি হোটেলে ভাত খেতে বসে ভ্রাম্যমাণ ফল ব্যবসায়ী আলম বলেন, বাড়তি দামের কারণে গরু-খাসির মাংস খাওয়া অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। মাসে দু-একদিন ব্রয়লার মুরগি খেতাম, তাও দাম বেড়েই চলেছে। বেশিরভাগ সময় আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খাই। এখন সে পথও বন্ধ হবে মনে হচ্ছে। আলুর ভর্তা দিয়ে ভাত খাই তাও বাজেট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সীমিত আয়ের মানুষদের পক্ষে এখন টিকে থাকাই মনে হচ্ছে অসম্ভব।
নগরীর বাংলাবাজার এলাকার মায়ের দোয়া হোটেলে ভাত খেতে বসে রাজমিস্ত্রি সাজু বলেন, আগে কাজের সাইডে গিয়ে ২০-৩০ টাকায় অনেক ভালোভাবে ভাত খেতে পারতাম। এখন আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেতেই গুনতে হয় ৩০-৩৫ টাকা। প্রতিটি জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ আমাদের শ্রমের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে না। দু-তিন বছর আগেও দৈনিক মজুরি পেয়েছি ৫শ’ টাকা এখনো ৫শ’ টাকাই পাচ্ছি।
আলুভর্তা ১০ টাকা করে বিক্রির বিষয়ে নগরীর বাংলাবাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী সফিক জানান, ভর্তা শুধু আলু দিয়ে হয় না, এরসঙ্গে আরো অনেক কিছুর দরকার হয়। সেইসব উপকরণের মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। সরিষার তেল, শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ আগের তুলনায় এখন পাইকারি কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। ফলে নিরুপায় হয়েই ভর্তার দাম ১০ টাকা করা হয়েছে।
শুধু আলুভর্তা নয়, পেঁপে, কাঁচকলা, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের ভর্তা ১০ টাকা করা হয়েছে বলে জানান এ হোটেল মালিক। বাংলাবাজারের আল-আমিন স্টোরের ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তেমন কিছু জানা নেই তার। তবে পাইকারি যেখান থেকে পণ্য ক্রয় করে আনেন তারা বলছে আলুর পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিপ্রতি ২ টাকা মূল্য কমেছে।
তবে ২০-২৫ টাকার পেঁয়াজ এখন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া সরিষার তেল আগে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা ছিল যা এখন বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও শুকনা মরিচ আগে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা বলে জানান এ বিক্রেতা।
আলু-পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে নগরীর আলুপট্টি মায়ের দোয়া বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মো. এনায়েত হোসেন বলেন, গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি আলু পাইকারী ১৬ টাকা বিক্রি হয়েছে। এ সপ্তাহে কমে ১২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারের আলু বিক্রেতারা ১৩ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি করছেন।