সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা নলছিটি থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ বা ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁরা থানা আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে অংশ নেন হাবিবুর রহমানসহ ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। সফল আক্রমণ শেষে তাঁরা ফিরে যান ক্যাম্পে।
এদিকে, থানা আক্রমণের সংবাদ পেয়ে পরদিন ঝালকাঠি থেকে একদল পাকিস্তানি সেনা নলছিটি এসে থানার পার্শ্ববর্তী দেওপাশা ও পরমপাশা গ্রাম দুটি জ্বালিয়ে দেয়। নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। গ্রামবাসীর ওই বিপদের সময় হাবিবুর রহমান নীরব না থেকে তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদের রক্ষা করার জন্য সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে সম্মুখযুদ্ধ শুরু করেন। তাঁরা পরমপাশা স্কুল, তালতলা ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। তাঁদের কাছে ভারী অস্ত্র বলতে ছিল একটি এলএমজি। এলএমজিম্যান ছিলেন হাবিবুর রহমান। তিনি তখন ‘এলএমজি হাবিব’ নামেই খ্যাতি পেয়েছিলেন। তিনি বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ করেন। পাকিস্তানি সেনারা টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যায়। হতাহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। সেদিন দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ ঘটনা নলছিটিতে ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ১৩ বা ১৪ সেপ্টেম্বরে।
হাবিবুর রহমান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন খুলনার ৫ নম্বর ইপিআর উইংয়ের সাপোর্ট প্লাটুনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে যুদ্ধ করেন ৯ নম্বর সেক্টরের টাকি সাব-সেক্টরের অধীনে। রাজাপুর, বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ থানা আক্রমণ এবং চাচৈর, গাবখান, বানারীপাড়া যুদ্ধসহ অনেক যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। আজ নলছিটির এই সূর্যসম্তানকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।